Description: সন্ধ্যা হয়—হয়। সূর্য অস্ত গিয়েছে, কিন্তু তার সমুজ্জ্বল ও আরক্ত আশীর্বাদের কিছু—কিছু আভাস এখনও দেখা যাচ্ছে আকাশের এখানে—ওখানে, মেঘের ফাঁকে—ফাঁকে। যাকে বলে তেপান্তরের মাঠ। ধু—ধু—ধু—ধু ময়দানের ভিতর দিয়ে ছুটে চলেছে বন্য বাতাস হু—হু—হু—হু! এবং সেই বন্য বাতাসের গতিকে অনুসরণ করবার জন্যেই যেন বাঁধা লাইনের উপর দিয়ে তীব্র বেগে ধেয়ে চলেছে একখানা রেলগাড়ি। ছুটতে ছুটতে ট্রেনখানা হঠাৎ থমকে দাঁড়িয়ে পড়ল—সম্ভবত ট্রেনের বিপদসূচক ঘণ্টার দড়িতে টান মেরে রেলগাড়িকে কেউ থামাতে বাধ্য করলে। তারপরেই একটা হই—হই—রই—রই কাণ্ড! ঠিক যেন কোনও অদৃশ্য জাদুকরের আশ্চর্য মন্ত্রশক্তিবলে আচম্বিতে প্রায় শতাধিক মনুষ্য—মূর্তি আবির্ভূত হল সেই বিজন তেপান্তর মাঠের উপরে। তারা যে এতক্ষণ কোথায় লুকিয়ে ছিল, তা অনুমান করাও অসম্ভব। তাদের প্রত্যেকেই সশস্ত্র। অনেকেরই হাতে রয়েছে বন্দুক বা রিভলভার এবং যাদের আগ্নেয়াস্ত্র নেই তাদেরও হাতে আছে ভয়াবহ বর্শা, তরবারি, কুঠার বা মোটামোটা লোহা—বাঁধানো বাঘ—মারা লাঠি। তারা সবাই বেগে ছুটে গেল ট্রেনের দিকে। তারপরই সেই বিজন মাঠের নিদ্রাতুর নিস্তব্ধতা হঠাৎ যেন আর্তনাদ ও ছটফট করে উঠল ঘন—ঘন বন্দুকের শব্দে, বহু মনুষ্য—কণ্ঠের হুঙ্কারে এবং আর্ত চিৎকারের পর চিৎকারে! সেই ট্রেনেরই একটি কামরায় বসেছিল বিমল এবং কুমার। কলকাতা ছেড়ে তারা কোনও জমিদার—বন্ধুর নিমন্ত্রণ রাখতে চলেছে। কিন্তু এই আকস্মিক গোলমাল শুনে তারা দুটো জানালার কাছে এসে বাইরের দিকে মুখ বাড়িয়ে দিলে। মিনিট—খানেক এদিক—ওদিক দৃষ্টিচালনা করে কুমার শুধোলে, ‘এ আবার কী কাণ্ড বিমল?’ বিমল বললে, ‘কাণ্ডটা অনুমান করা একটুও কঠিন নয়। একদল ডাকাত লুটপাট করবার জন্যে ট্রেনখানাকে আক্রমণ করেছে! তাদেরই দলের কোনও লোক গাড়ির ভিতরে ছিল, নির্দিষ্ট স্থানে এসে হঠাৎ ‘অ্যালার্ম চেন’ টেনে গাড়িখানাকে থামিয়ে দিয়েছে।’ দলে—দলে লোক বিকট চিৎকার ও অস্ত্রশস্ত্র আস্ফালন করতে করতে বেগে ছুটে আসছে তাদের কামরার দিকেই! কুমার বললে, ‘এখন আমাদের কী করা উচিত?’