Description: ফুটি-ফুটি করছে ভোরের আলো। কলকাতায় গড়ের মাঠ। গাছে-গাছে বিহঙ্গদের ঐকতান। এখানে ওখানে অশ্বচালনা করছে পাঞ্জাবি ঘোড়সওয়াররা। প্রাতভ্রমণে বেরিয়েছে আরও অনেকে এবং তাদের মধ্যে দেখা যাচ্ছে আমাদের পরিচিত তিনটি মানুষকে সাধের গোয়েন্দা জয়ন্ত আর মানিক ও পুলিশ কর্মচারী সুন্দরবাবু। শরৎ ঋতুর জন্যে আসর ছেড়ে দেবার আগে শেষ-বর্ষা যথেষ্ট বিক্রম প্রকাশ করে গিয়েছে গতকল্য রাত্রে। সারা শহরটা ঘণ্টা কয়েক ধরে স্নান করেছে এমন ঘন বৃষ্টিধারায় যে, পথের আর মাঠের অনেক জায়গাতেই এখনও থইথই করছে ঘোলাটে জল। রাত দুটোর পরে বৃষ্টি থেমেছে বটে, কিন্তু গড়ের মাঠ এখনও প্রাতভ্রমণের উপযোগী হয়ে ওঠেনি। তবু প্রভাতী ভ্রমণে যারা অভ্যস্ত এ সময়টায় তারা ঘরের চার দেওয়ালের মধ্যে বন্দি হয়ে থাকতে চায় না। জয়ন্ত আর মানিক হচ্ছে এই জাতীয় জীব। কেবল সূর্যোদয়ের আগে নয়, সূর্যাস্তের পরেও একবার মুক্ত আকাশ বাতাসের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক স্থাপন করতে না পারলে তারা যেন আত্মস্থ হতে পারে না।সেরা ট্যুর প্যাকেজ এ বাতিক কোনওদিনই ছিল না সুন্দরবাবুর। কিন্তু ইদানীং তাঁর উদরদেশের বিপুলতা এতটা বেড়ে উঠেছে যে, চিকিৎসকরা পরামর্শ দিয়েছেন, নিয়মিতভাবে প্রত্যহ কিঞ্চিৎ ব্যায়াম– অর্থাৎ অন্তত মাইলদুয়েক পদব্রজে ভ্রমণ করতে। তাই ইচ্ছার বিরুদ্ধেও আজকাল তাকে হতে হয়েছে জয়ন্তদের ভ্রমণের সঙ্গী। ভুড়ির দ্বারা ভারাক্রান্ত সুন্দরবাবু কিছুক্ষণ পদচালনা করবার পর শ্রান্ত স্বরে বললেন, মানিক, পথের আর মাঠের অবস্থা দেখছ তো? –দেখছি। –আজ আমি কিছুতেই বেড়াতে আসতুম না। –তবে এলেন কেন? –তোমাদের উৎপাতের দায়ে পড়ে। ভোর হতে না হতেই, কাক-চিল না ডাকতেই, বাসায় ঢুকে তুমি গাধার মতো যা ডাকাডাকি শুরু করলে। বাড়িতে ডাকাত পড়েছে ভেবে ছেলেমেয়েগুলো পর্যন্ত চমকে জেগে উঠল। তোমার গর্দভ কণ্ঠকে রুদ্ধ করবার জন্যই আজ আমাকে তাড়াতাড়ি বাইরে বেরিয়ে আসতে হয়েছে। মানিক মুখ টিপে হাসতে-হাসতে বললে, আমাকে গাধা বলে আপনি যদি খুশি হন, আমি আপত্তি করব না। কিন্তু বাইরে এসে কি দেখছেন না, আজকের দিনটির বিশেষত্ব? –হুম! বিশেষত্বের মধ্যে তো দেখছি কেবল জল, কাদা আর পিছল পথ। –আর কিছু দেখছেন না? –উঁহু!
Golpokhuro App
Listen to Complete Audiobooks