Description: মাসখানেক আগে শ্যামলপুরের বিখ্যাত জমিদার কমলকান্ত রায়চৌধুরী কলকাতার এসেছিলেন বড়দিনের উৎসব দেখবার জন্যে। তাঁর একমাত্র পুত্রের নাম বিমলাকান্ত। বয়স দশ বৎসর। একদিন সকালে সে বাড়ি-সংলগ্ন বাগানে খেলা করছিল। তারপর অদৃশ্য হয়েছে হঠাৎ। লোহার ব্যবসায়ে বাবু পতিতপাবন নন্দী ক্রোড়পতি হয়েছেন বলে বিখ্যাত। তার টাকা অসংখ্য বটে, কিন্তু সন্তান-সংখ্যা মাত্র দুটি। একটি ছেলে, একটি মেয়ে। ছেলেটির বয়স মোটে আট বৎসর। পাড়ারই ইস্কুলে সে পড়ে। কিন্তু একদিন ইস্কুলে গিয়ে আর ফিরে আসেনি। তারপরদিনও না, তারও পরদিনও না। তারপর বিশ দিন কেটে গিয়েছে, আজ পর্যন্ত তার আর কোনও খবরই পাওয়া যায়নি। দুর্জয়গড়ের করদ মহারাজা স্যার সুরেন্দ্রপ্রতাপ সিংহ বাহাদুর বড়দিনে বড়লাটের সঙ্গে সাক্ষাৎ করবার জন্যে কলকাতায় এসেছিলেন। তাঁর সিংহাসনের উত্তরাধিকারী হচ্ছেন যুবরাজ বিজয়প্রতাপ, বয়স চার বৎসর মাত্র। গত পরশু রাত্রে ধাত্রী গঙ্গাবাঈ যুবরাজকে নিয়ে ঘুমোতে যায়। কিন্তু গেল কাল সকালে উঠে দেখে, বিছানায় যুবরাজ নেই। সারা রাজবাড়ি খুঁজেও যুবরাজকে পাওয়া যায়নি। রাত্রির অন্ধকার যুবরাজকে যেন নিঃশেষে গ্রাস করে ফেলেছে! গঙ্গাবাঈ কোনওরকম সন্দেহের অতীত। তার বয়স ষাট বৎসর; ওর মধ্যে পঞ্চাশ বৎসর কাটিয়েছে সে দুর্জয়গড়ের প্রাসাদে। বর্তমান মহারাজা পর্যন্ত তার হাতেই মানুষ। সুতরাং অকারণেই কলকাতা চঞ্চল হয়ে ওঠেনি। এক মাসের মধ্যে তিনটি শ্রেষ্ঠ পরিবারের বংশধর অদৃশ্য! চারিদিকে বিষম সাড়া পড়ে গিয়েছে। ধনীরা শঙ্কিত, জনসাধারণ চমকিত, পুলিশরা ব্যতিব্যস্ত! খবরের কাগজরা যো পেয়ে পুলিশের বিরুদ্ধে মহা আন্দোলন শুরু করে দিয়েছে। এমনকী গুজব শোনা যাচ্ছে যে, দুর্জয়গড়ের যুবরাজের অন্তর্ধানের পর গভর্মেন্টেরও টনক নড়েছে। সরকারের তরফ থেকে পুলিশের ওপরে এসেছে নাকি জোর হুমকি! কিন্তু পুলিশ নতুন কোনও তথ্যই আবিষ্কার করতে পারেনি। সম্ভ্রান্ত ও ধনী পরিবারের তিন-তিনটি বংশধর একমাসের ভিতরে নিরুদ্দেশ হয়েছে ব্যস, এইখানেই সমস্ত খোঁজাখুঁজির শেষ। তারা কেন অদৃশ্য হয়েছে, কেমন করে অদৃশ্য হয়েছে এবং অদৃশ্য হয়ে আছেই-বা কোথায়, এ-সমস্তই রহস্যের ঘোর মায়াজালে ঢাকা। কলকাতায় মাঝে মাঝে ছেলেধরার উৎপাত হয় শুনি। কিন্তু ছেলেধরারা ধনী গরিব বাছে বলে শুনিনি। তারা ছেলে ধরত নির্বিচারে এবং গরিবেরই ছেলেচুরি করবার সুযোগ পেত বেশি। এও শোনা কথা যে, সন্ন্যাসীরা নিজেদের চ্যালার সংখ্যা বাড়াবার ও বেদেরা নিজেদের দলবৃদ্ধি করবার জন্যেই ওভাবে ছেলেচুরি করে। আবার অধিকাংশ ক্ষেত্রেই ছেলেধরার গুজব যে বাজে হুজুগ বলে প্রমাণিত হয়েছে, এ-সত্যও কারুর জানতে বাকি নেই। কিন্তু এবারের ঘটনাগুলো নতুনরকম। প্রথমত, চুরি যাচ্ছে কেবল ধনীদেরই সন্তান। দ্বিতীয়ত, তিনটি ছেলেই আপন আপন পিতার সম্পত্তির একমাত্র উত্তরাধিকারী। তৃতীয়ত, কেউ যে এদের ধরে নিয়ে গিয়েছে এমন কোনও প্রমাণও নেই।
Golpokhuro App
Listen to Complete Audiobooks